চট করে বেরিয়ে আসুন পুরী থেকে।
নদী, পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্র, ম্যানগ্রোভ আর ধর্মীয় তীর্থক্ষেত্রের মহামিলনের অপরূপ মিশেলের আর এক নাম ওড়িশা। বেশ কয়েকটি সার্কিটকে কেন্দ্র করে ঘুরে নেওয়া যায় ওড়িশার নানান নিসর্গে। ছোট্ট বা লম্বা ছুটিতে বেড়িয়ে পড়ুন। আজ প্রথম পর্ব।
পুরী বেড়াতে যাননি, এমন পর্যটকের সংখ্যা হাতে গোনা। ওড়িশার জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। সোজা চলে আসুন ‘গেটওয়ে অব হেভেন’ বা স্বর্গদ্বারে। কথিত আছে, স্বর্গদ্বারে স্নান করলে সব পাপ ধুয়ে যায়। নীল আকাশের নীচে, শান্ত সুনীল সাগরে স্নান সেরে নিন। ভারতের চারধামের অন্যতম হল পুরী বা শ্রীক্ষেত্র। প্রভু জগন্নাথের স্বভূমি। তাঁর মন্দিরের খ্যাতি জগৎজোড়া। এ বার চলে আসতে পারেন শ্রী শ্রী জগন্নাথের মন্দিরে। রাজা যযাতি কেশরীর তৈরি মন্দিরটি ১১৯৮ সালে সংস্কার করেন রাজা অনঙ্গ ভীমদেব। আজকের মন্দিরটির তিনিই রূপকার। নীল পর্বতের ১০ একর জমির উপর মন্দিরটি শক্তপোক্ত প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। চারটি প্রবেশদ্বার। সিংহদ্বার, হস্তিদ্বার, অশ্বদ্বার, খাঞ্জাদ্বার। ২২টি সিঁড়ি বেয়ে মন্দিরপ্রাঙ্গন। যা ৪২৪x৩১৫ ফুটের বিশাল প্রাচীরে ঘেরা। মূল মন্দিরের গর্ভগৃহে শ্বেতবর্ণের বলরাম, পীতবর্ণের সুভদ্রা এবং কৃষ্ণবর্ণের প্রভু জগন্নাথ। বামে মহালক্ষ্মী, ডানে মহা সরস্বতী। তাঁরা প্রভু জগন্নাথের স্ত্রী। সবার পিছনে নীলমাধব।
প্রতি ১২ বছর অন্তর প্রভু জগন্নাথের নব কলেবর উৎসব পালিত হয়। পুরনো বিগ্রহকে বৈকুণ্ঠধামে সমাহিত করা হয়। মন্দির প্রাঙ্গনে রয়েছে ৫টি কুণ্ড। নরেন্দ্র, শ্বেতগঙ্গা, মার্কণ্ড, ইন্দ্রধনু, মহাবোধি। মুক্তি মণ্ডপ মহালক্ষ্মী মন্দির, সূর্যমন্দির আর প্রভু জগন্নাথদেবের রান্নাঘর। প্রবেশ নিষেধ। দিনে ৫ বার ৫৬ পদের ভোগ দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষেরা প্রসাদ হিসেবে এই ভোগ পেয়ে থাকেন। দু’জনের জন্য খরচ পড়বে ৩৬০ টাকা। হিন্দু ছাড়া এই মন্দিরে অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের প্রবেশ নিষেধ। এ ছাড়াও দেখে নিতে পারেন গুন্ডিচা মন্দির। যা প্রভু জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি নামে পরিচিত। রথের সময় ৯ দিন এখানেই কাটান। প্রায় ১৫০ মঠ ও নানান মন্দির রয়েছে পুরীতে। বাকি সময় পুরীর সমুদ্রস্নানে,আড্ডায় মশগুল হয়ে থাকুন। কথায় আছে, তিন দিন তিন রাত পুরীতে কাটালে পুণ্যলাভ হয়।
জগন্নাথ মন্দির
কী ভাবে যাবেন:
কলকাতা থেকে পুরী যাওয়ার অনেক ট্রেন। দূরত্ব ৫০২ কিমি। ২২২০১ পুরী দুরন্ত এক্সপ্রেস (সোম, বুধ, শুক্র) ছাড়ে শিয়ালদহ থেকে। ১২৮২১ ধৌলি এক্সপ্রেস। ১৮৪০৯ জগন্নাথ এক্সপ্রেস। ১২৮৯৫ পুরী এক্সপ্রেস। ১২৮৮১ হাওড়া-পুরী গরিবরথ (মঙ্গল, বৃহস্পতিবার), ২২৮৩৫ শালিমার-পুরী, ছাড়ে প্রতি বুধবার।
পুরী থেকে চিলিকা
পুরী থেকে সাতপারার দূরত্ব ৫০ কিমি। মাঝপথে ব্রহ্মগিরিতে থামুন। দেখে নিন ‘আলারনাথ মন্দির’। পুরীতে জুন মাসে যখন মন্দির বন্ধ থাকে, তখন ভক্তরা এই মন্দির দর্শন করতে আসেন। এর পর সাতপারা পৌঁছন। এখান থেকে সরকারি বোটে চড়ে দেখে নিন সাতপাড়া ডলফিন পয়েন্ট। সমুদ্রে ভেসে এসে ডলফিনের দল চিলিকায় বাসা বেঁধেছে। সাতপারার চিলিকায় এদের দেখা মেলে। কখনও বোটের পাশাপাশি, কখনও নানান বিভঙ্গে কালচে শরীরটাকে শূন্যে ছুড়ে কসরত দেখতে হলে আসতে হবে চিলিকার সাতপাড়ায়।
কোনারকের সূর্যমন্দির
কোনারক
ভারতের যে তিনটি শহরে সূর্যমন্দির রয়েছে কোনারক তার মধ্যে অন্যতম। মন্দির জুড়ে নানান মিথ। ইতিহাস বলছে, ১৩ শতকে গঙ্গাবংশীয় রাজা নরসিংহদেব কোনারকের মন্দির নির্মাণ করেন। ওড়িশা শিল্পশৈলীর এক অনুপম নিদর্শন। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মর্যাদাপ্রাপ্ত মন্দিরের গায়ে পাথরের সূক্ষ্ম খোদাই কারুকাজে মুগ্ধ হতে হয়। মন্দির পরিক্রমায় দেখে নিন সে যুগের নানান ঘটনাক্রম। শিকার দৃশ্য, নৃত্যরতা নারী, রাজসভার দৃশ্যাবলি, পৌরাণিক চিত্র, শিল্পমণ্ডিত রথচক্র-সহ দেবদেবী। প্রতিটি মূর্তি স্বতন্ত্র নন্দনতত্ত্বের সূক্ষ্ম অনুভূতির ছোঁয়া। পাথরে খোদিত হলেও তারা যেন প্রাণবন্ত।
আসুন, কোনারকের আশপাশটা একটু বেড়িয়ে নেওয়া যাক। এখান থেকে তিন কিমি দূরে চলে আসুন চন্দ্রভাগা সৈকত। পুরীর মতো অতটা জমজমাট না হলেও চুটিয়ে সমুদ্রস্নান উপভোগ করা যায়। এখানকার সূর্যোদয়ের বেশ খ্যাতি আছে। ৮ কিমি দূরে সাগর মিশেছে কুশভদ্রা নদীতে, সেই সঙ্গমস্থলে রামাচণ্ডী মন্দির। ১০ কিমি দূরের বিস্তীর্ণ বালুচরের বুকে কপিলেশ্বর মন্দিরটি অসাধারণ। ২৫ কিমি গেলেই কাকটপুর। প্রাচী নদীর পাড়ে মঙ্গলাদেবীর মন্দির। প্রভু জগন্নাথদেবের নবকলেবর উৎসবের আগে দেবী মঙ্গলা স্বপ্নাদেশে জানান দেন, দারুব্রহ্মের ঠিকানা। এ ছাড়াও অবধূতা মঠ, সান ডায়াল, লাইটহাউস দেখে নিন গাড়িভাড়া করে। হাতে একটা দিন সময় রাখুন। রাতে মায়াবী আলোকমালায় সেজে ওঠে কোনারকের মন্দির, স্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে ইতিহাস যেন ফিসফাস কথা বলে।
কী ভাবে যাবেন
পুরী থেকে কোনারকের দূরত্ব ৫৫ কিমি। বাসে অথবা গাড়িতে চলে আসা যায়।
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.