সত্যজিৎ রায়

সত্যজিৎ রায়
[১৯২১-১৯৯২]

বিশ্ববরেণ্য জাপানী চলচ্চিত্র পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়া তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন, “এই পৃথিবীতে বাস করে সত্যজিৎ রায়ের ছবি না দেখে চন্দ্র-সূর্য না দেখার মতই অদ্ভুত ঘটনা।” রবীন্দ্রনাথের পর বাংলার সাংস্কৃতিক জগতের অপর কেউই বিশ্বের দরবারে এতখানি সম্মান পাননি। ভারতীয় চলচ্চিত্রকে তিনি শুধু যে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাই নয়, তাকে এক মহত্তর সৌন্দর্যে উত্তরণ ঘটিয়েছেন।


বিরল প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটির জন্ম ১৯২১ সালের ২রা মে। কৃতী বংশের যোগ্য উত্তরপুরুষ। সংস্কৃতির ক্ষেত্রে একমাত্র ঠাকুর পরিবারের সঙ্গেই এই পরিবারের তুলনা করা যায়।সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন বাংলা শিশু সাহিত্যের অন্যতম স্রষ্টা। সাহিত্য ছাড়াও বাংলা ছাপখানার উন্নতির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান বিরাট। ১৯০০ সালে তিনি সুকিয়া স্ট্রীটের বাড়িতে ইউ রায় অ্যান্ড সন্স নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত করেন। এখান থেকে বহু বই প্রকাশিত হয়েছিল।
উপেন্দ্রিকিশোরের বড় ভাই সারদারঞ্জন ছিলেন পন্ডিত মানুষ আর ক্রিকেটের ভক্ত। আরেক ভাই কুলদারঞ্জনও ছিলেন সাহিত্যিক। তাঁর কন্যা বিখ্যাত সাহিত্যিক লীলা মজুমদার। উপেন্দ্রকিশোরের পুত্র সুকুমার রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালে। মাত্র আট বছর বয়স থেকেই শুরু হয়। তাঁর ছবি আঁকা, কবিতা লেখা। ১৯১৩ সালে উপেন্দ্রকিশোর সন্দেশ পত্রিকা চালু করবার পর সুকুমার সেখানে নিয়মিত লিখতেন। ১৯১৪ সালে সুকুমারের বিয়ে হল ঢাকার বিখ্যাত সমাজসেবক কালীনারায়ণ গুপ্তের নাতনি সুপ্রভার সাথে। বিবাহের ৭ বছর পর জন্ম হয় সত্যজিতের। ১৯২৩ সাল, সত্যজিৎ তখন দু বছরের শিশু, কয়েকদিনের জ্বরে মাত্র ছত্রিশ বছর বয়সে মারা গেলেন সুকুমার। এই স্বল্প জীবনকালেই তিনি রচনা করেছেন আবোল তাবোল, হ-য-ব-র-ল, পাগলা পশুর মত অসাধারণ শিশু সাহিত্য।


১৯৪৮ সালে সত্যজিৎ তাঁর মায়ের বৈমাত্রেয় ভাই চারুচন্দের ছোট মেয়ে বিজয়াকে বিয়ে করলেন। দুজনেই পরস্পরকে ভালবাসতেন। শুধুমাত্র পুত্রের সুখের কথা ভেবে সুপ্রভা দেবী এই বিবাহে মত দিলেন। চাকরিসূত্রে কয়েক মাসের জন্য ইংল্যান্ডে গেলেন সত্যজিৎ। এই সময় তিনি ইউরোপ-আমেরিকার শ্রেষ্ঠ পরিচালকদের অসংখ্য ছবি দেখতেন। যা দেখতেন গভীরভাবে অনুভব করবার চেষ্টা করতেন। ভারতে ফিরে এসে স্থির করলেন পথের পাঁচালী ছবি করবেন।


সত্যজিতের মায়ের এক বন্ধুর সাথে বিধান রায়ের পরিচয় ছিল। সেই সূত্রেই সত্যজিৎ তাঁকে পথের পাঁচালীর কিছুটা অংশ দেখালেন। পথের পাঁচালী বিধান রায়ের ভাল লেগেছিল। তিনি দশ হাজার টাকার সরকারী অনুদান দিলেন। আমেরিকা থেকে এসেছিলেন মনরো হুইলার। পথের পাঁচালীর অর্ধেক দেখেই তিনি মুগ্ধ হলেন। ১৯৫৫ সালের এপ্রিল মাসে নিউইয়র্কে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। তিনি সেখানে পাঁচালীকে পাঠাবার জন্যে অনুরোধ করলেন। সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ছবি শেষ হল। বাক্সবন্দী পথের পাঁচালী ছবি পাঠানো হল আমেরিকায়। ১৯৫৫ সালে পথের পাঁচালী কলকাতার বসুশ্রী সিনেমা হলে মুক্তি পেল। প্রযোজক পশ্চিমবঙ্গ সরকার। প্রথম দিকে দর্শকরা এই ছবিটিকে গ্রহণ করতে না পারলেও কয়েক সপ্তাহ পর থেকে চারদিকে সত্যজিতের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ল। জনসাধারণের ভিড় বাড়তে থাকে। এর মূলে ছিল পথের পাঁচালীর অসাধারণত্ব। বিভূতিভূষণের উপন্যাসের মূল সুরটিকে এক আশ্চর্য দক্ষতায় ছবির পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন সত্যজিৎ। প্রত্যেকের অভিনয় ছিল জীবন্ত আর সজীব। এর সাথে ছিল রবিশঙ্করের অসাধারণ সংগীত। তিনিই প্রথম দেখালেন চলচ্চিত্রে সংগীতের কত সার্থক প্রয়োগ ঘটানো সম্ভব। প্রকৃতপক্ষে পথের পাঁচালীর মধ্যে দিয়ে সত্যজিৎ চলচ্চিত্রে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন।
১৯৫৬ সালে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেল পথের পাঁচালী। তারপর দেশে-বিদেশে একের পর এক পুরস্কার। এক অখ্যাত বাঙালী তরুণ শুধুমাত্র একটি ছবি করেই জগৎবিখ্যাত হয়ে গেলেন। পথের পাঁচালী শুধু একটি ছবি নয়, গভীর প্রশান্ত সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত এক তুলনাহীন সৃষ্টি-যা দেশকাল উত্তীর্ণ হয়ে মানুষকে অভিভূত করে। সেই কারণেই জহরলাল বলেছিলেন, “সত্যজিৎ রায় আর তাঁর ছবি পথের পাঁচালী আমাদের গর্ব।”
পথের পাঁচালীর সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে সত্যজিৎ তৈরি করলেন অপরাজিতা। অপু ট্রিলজির দ্বিতীয় ছবি। অপুর কৈশোর জীবনের কাহিনী। অপরাজিতা সাধারণ দর্শকরা গ্রহণ করতে না পারলেও ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে পেল শ্রেষ্ঠ পুবস্কার গোল্ডেন লায়ন।
এর পর সত্যজিৎ তৈরি করলেন অপু ট্রিলজির শেষ ছবি অপুর সংসার। এই ছবিতে নিয়ে এলেন তরুণ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আর চৌদ্দ বছরের কিশোরী শর্মিলা ঠাকুরকে। লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অপুর সংসারকে দেওয়া হল শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। বিশ্বের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এই ট্রিলজির কোন তুলনা নেই। মহান সাহিত্যস্রস্টাদের সৃষ্টির সাথেই এর তুলনা করা যায়। অপরাজিতা ছবি মুক্তি পায় ১৯৫৬ সালে। এই ছবি ব্যবসায়িক সাফল্য না পাওয়ার জন্য সত্যজিৎ অপুর সংসারের আগে দুটি ছোট ছবি তৈরি করেন পরশ পাথর (১৯৫৭) আর জলসাঘর (১৯৫৮)। জলসাঘর তারাশঙ্করের একটি ছোট গল্প। দুটি ছবিতেই সত্যজিতের প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটেছে।


এরপর দেবী। হিন্দুদের প্রচলিত বিশ্বাস আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র আঘাত হানলেন সত্যজিৎ। এক শ্রেণীর মানুষ এই ছবির মুক্তির ব্যাপারে তীব্র বিরোধিতা প্রকাশ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত জহরলালের হস্তক্ষেপে এই ছবি মুক্তি পেল। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক  রর্বাট স্টীল লিখেছেন, সত্যজিৎ রায় তাঁর সিনেমার জীবন শুরুই করেছেন মাস্টারপীস ছবি দিয়ে। যদি অপু সৃষ্টি না হত তবে দেবীকে সেই সম্মান দেওয়া হত। দেবী সত্যজিতের সবচেয়ে প্রাঞ্জল আর সরল ছবি। এর মধ্যে আছে এক আবেগের গভীরতা আর সৌন্দর্য যা তুলনাহীন।
রবীন্দ্রকাব্য সত্যজিৎকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছিল। রবীন্দ্রনাথের তিনটি ছোট গল্প অবলম্বনে তৈরি করলেন তিন কন্যা (১৯৬১)-মণিহারা, পোস্টমাস্টার আর সমাপ্তি। মেলবোর্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরুস্কার পেল তিন কন্যা। সমাপ্তি গল্পেই প্রথম অভিনয় করলেন কিশোরী অপর্ণা। এর পর একে একে মুক্তি পেতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘা (১৯৬২), অভিযান (১৯৬২), মহানগর (১৯৬৩), চারুলতা (১৯৬৪), কাপুরুষ ও মহাপুরুষ (১৯৬৫), নায়ক (১৯৬৬)। নায়ক সত্যজিত্যের এক সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী ছবি। এক বিখ্যাত অভিনেতার জীবন যন্ত্রণার কাহিনী।
পথের পাঁচালীর পর গ্রাম্যজীবন নিয়ে দ্বিতীয় ছবি করেন বিভূতিভূষণের কাহিনী অবলম্বন করে অশনি সংকেত (১৯৭৩)। ৪৩-এর মন্বন্তর কিভাবে গ্রামের সহজ সরল জীবনকে ধ্বংস করে নিয়ে এল দুর্ভিক্ষ, মহামারী আর ব্যভিচার, তারই এক জীবন্ত চিত্র। এই ছবির কোন চরিত্রকেই মনে হয়নি তারা অভিনয় করছে। সকলেই যেন জীবনের পাতা থেকে উঠে এসেছে। দুর্ভিক্ষের উপর এমন ছবি বিশ্বে খুবই তৈরি হয়েছিল। বার্লিন, শিকাগো দুটি চলচ্চিত্র উৎসবেই অশনি সংকেত পেয়েছিল সর্বশ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার। মুন্সী প্রেমচাঁদের কাহিনী অবলম্বন করে প্রথম হিন্দী ছবি করলেন শতরঞ্জ কে খিলাড়ী। দুই বিরাসী ওমরাহ সমাজ সংসার ভুলে দাবা খেলায় মত্ত হয়ে থাকে। অন্যদিকে ইংরেজরা রাজনৈতিক চালে এক একটি রাজ্য দখল করতে থাকে। নিতান্ত সাধারণ কাহিনী, ঘটনার ঘনঘটা নেই। কিন্তু প্রতিভার স্পর্শে অসাধারণ ছবি হয়ে উঠেছে শতরঞ্জ কে খিলাড়ী। সত্যজিতের ছবির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল অতি সামান্য বিষয়ও যাতে নিখুঁত হয় সেদিকে ছিল তাঁর সতর্ক দৃষ্টি। সেই কারণে স্যার রিচার্ড অ্যাটনবরো বলেছিলেন, “সত্যজিতের যে জিনিসটি আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছিল তা প্রতিটি বিষয়ের প্রতি তাঁর তীক্ষ্ন দৃষ্টি। একমাত্র চ্যাপলিন ছাড়া আর কোন পরিচালকের সত্যজিতের মত সিনেমা পরিচালনার ব্যাপারে সকল বিষয়ে প্রতিভা আছে কিনা সন্দেহ।”
নিজেরই কাহিনী অবলম্বন করে সত্যজিৎ তৈরি করেছিলেন দুটি গোয়েন্দা ছবি সোনারকেল্লা আর জয় বাবা ফেলুনাথ। ‍নিছক গোয়েন্দা লোমহর্ষক ঘটনার মধ্যে তিনি কাহিনীকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। মনোমুগ্ধকর অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যের সাথে যুক্ত করেছিলেন হাসি আর হেঁয়ালি। ছোটদের জন্যে এত সুন্দর গোয়েন্দা কাহিনী খুব কমই তৈরি হয়েছে।
সত্যজিৎ যখন ডি. জে. কীমারে চাকরি করতেন তখনই তাঁর মনে হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের “ঘরে বাইরে” অবলম্বনে ছবি করবেন। কিন্তু সেই সময় তাঁর ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। অবশেষে ১৯৪৮ সালে তৈরি করলেন ঘরে বাইরে। রবীন্দ্র রচনার মূল সুরটিকে এত নিপুণভাবে সত্যজিৎ তাঁর ছবিতে তুলে ধরেছেন যা আর কোন পরিচালকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি। ক্রমশই তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছিল। ঘরে বাইরের পর বেশ কয়েক বছর কোন ছবি করেননি। ১৯৮৯ সালে ইবসেনের কাহিনী অবলম্বনের তৈরি করেছিলেন গণশত্রু (১৯৮৯), তারপর শাখা-প্রশাখা (১৯৯০), শেষ ছবি আগন্তুক (১৯৯১)।


চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবে সত্যজিতের স্থান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কয়েকজন পরিচালকের মধ্যে। তাঁর ছবিতে গভীর সূক্ষ্ম অনুভূতি, নান্দনিক সৌন্দর্য, জীবনের ব্যাপ্তি, বিষয়বস্তুর প্রতি নিষ্ঠার প্রকাশ দেখতে পাওয়া যায় তা তুলনাহীন। তাঁর ছবি যেন সংগীত, শ্রেষ্ঠ কবির কবিতা। যতবার দেখা যায় ততবারই উন্মোচন হয় নতুন সৌন্দর্য,মনের জগতে উন্মোচিত করে এক নতুন সৌন্দর্য, মনের জগতে উন্মোচিত করে এক নতুন দিগন্ত। যার মধ্যে আমরা আমাদেরই খুঁকে পাই।
চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিতের খ্যাতি জগৎ জোড়া হলেও সাহিত্যস্রষ্টা হিসাবে তাঁর খ্যাতি কিছুমাত্র কম নয়। তাঁর পিতা-পিতামহের ঐতিহ্য অনুসরণে তিনিও নানান বিষয় নিয়ে লিখতেন। তাঁদের পারিবারিক পত্রিকা চালু হল। এই পত্রিকার জন্য নিজেই কলম ধরলেন সত্যজিৎ। নিজে ছোট ছোট ছড়া লিখতেন। এবার লিখলেন ধারাবাহিক বিজ্ঞানভিত্তিক উপন্যাস প্রফেসর শঙ্কু। পরবর্তীকালে প্রফেসর শঙ্কুকে নিয়ে আরো কয়েকটি বই লিখেছেন। তবে সত্যজিতে আসল খ্যাতি তাঁর ফেলুদাকে নিয়ে। শিশু-কিশোরদের কাছে ফেলুদার আকর্ষণ অতুলনীয়। গোয়েন্দা গল্পের গোয়েন্দা ফেলুদা তার স্রষ্টার মতই বিখ্যাত। সত্যজিতের গল্প বলার ভঙ্গি অসাধারণ। সহজ সরল ভাষা, কাহিনীর নিটোল বুনন, অপূর্ব বর্ণনা, টানটান উত্তেজনা পাঠককে শেষ পর্যন্ত মুগ্ধ করে রাখে। তাঁর রচনা, চিরায়ত সাহিত্যের পর্যায়ে না পড়লেও দীর্ঘ দিন পর্যন্ত পাঠকের মনোরঞ্জন করতে পারবে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
ফেলুদা শঙ্কু ছাড়াও সত্যজিৎ বেশ কিছু ছোট গল্প লিখেছেন, যেমন এক ডজন গপ্পো, আরো এক ডজন, আরো বারো-এই বইগুলির প্রতিটি গল্পই যেমন উপভোগ্য তেমনি সার্থক সৃষ্টি।
চলচ্চিত্র নিয়ে তাঁর প্রথম ইংরেজি বই “Our Films their Films” বিশ্ব চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে এক মূল্যবান সংযোজন। এতে একদিকে যেমন ফুটে উঠেছে তাঁর সহজাত রসবোধ, অন্যদিকে গভীর পান্ডিত্য। তাঁর আত্মজীবনী “যখন ছোট ছিলাম” খুবই উপভোগ্য। বিরাট প্রতিভার অধিকারী এই মানুষটি চিত্রশিল্পী হিসাবেও ছিলেন অসাধারণ। নিজের  বইয়ের সমস্ত ছবি নিজেই আঁকতেন। এছাড়া বহু বিখ্যাত বইয়ের প্রচ্ছেদ তাঁরই  আঁকা। অসামান্য কীর্তির জন্য অসংখ্য পুরুস্কার পেয়েছেন সত্যজিৎ। পথের পাঁচালী দিয়ে ১৯৫৬ সালে পান প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার আর তার পরিসমাপ্তি ঘটে ৩০শে মার্চ ১৯৯২ অস্কার পুরস্কার প্রদানের মাধ্যমে। এর মাঝে তিনি দেশে-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন, নানাভাবে সম্মানিত হয়েছেন। শ্রেষ্ঠ পরিচালনা, শ্রেষ্ঠ ছবির জন্য পুরস্কারের কথা বাদ দিলেও নানান বিশ্ববিদ্যালয়। শান্তিনিকেতন থেকে পেয়েছেন দেশিকোত্তম। ১৯৮৫ সালে পেয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার।
১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিঁতের কলকাতায় এসে সত্যজিৎকে দিলেন সে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান “লিজিয়ন অফ অনার”। এ এক দুর্লভ সম্মান জানিয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, “ ভারতের সাংস্কৃতিক জগতে সত্যজিৎ রায় এক অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। চলচ্চিত্র জগতে এই শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ পুরুষ। তাঁর মতো এক মহান ব্যক্তিকে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ সম্মান  জানাতে পেরে আমি ও আমার দেশবাসী আজ কৃতজ্ঞ বো্ধ করছি। জীবনের অন্তিম পর্বে এল ইলিউডের সর্বোচ্চ সম্মান অস্কার। যা পৃথিবীর সব চলচ্চিত্র নির্মাতার কাছে চির আকাঙ্ক্ষিত বস্তু। তাঁকে এই পুরস্কার দেবার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন বিখ্যাত ৭০ জন মানুষ। এঁদের মধ্যে ছিলেন মূল্যায়ন করে তাঁকে দেওয়া হয় সাম্মানিক অস্কার। তাঁর আগে মাত্র পাঁচজনকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়-গ্রেটা গার্বো (১৯৫৫), ক্যারি গ্রান্ট (১৯৬৯), চার্লি চ্যাপলিন (১৯৭২), জেমস স্টুয়ার্ট (১৯৮৪), কুরোসাওয়া (১৯৮৯)।
যখন অস্কার পুরস্কারের কথা ঘোষণা করা হল, সত্যজিৎ তখন অসুস্থ। বিছানায় শয্যাশায়ী। তিনি বলেছিলেন, “অস্কার পাওয়ার পর আমার পাওয়ার আর কিছুই রইল না।”
জীবনের সব পাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই পুরস্কার পাওয়ার মাত্র তেইশ দিন পর এই পার্থিব জীবন থেকে চিরচিদায় নিলেন সত্যজিৎ (২৩শে এপ্রিল ১৯৯২)।

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.

[blogger]

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget