মানসিক প্রশান্তি জন্য ভ্রমণ প্রতিষেধকের মতোই। কাজকে ছুটি দিয়ে ক্লান্তি দূর করতে শরীর ও মনকে চাঙ্গা করার জন্য এর বিকল্প নেই বললেই চলে। আর যারা নিয়মিত ভ্রমণে অভ্যস্ত, প্রকৃতির নতুন দিক উন্মোচন যাদের নেশা, তাদেরতো আর কোনো উপলক্ষের দরকার নেই। কিন্তু, তাই বলে চীনের মহাপ্রাচীর পুরোটা ঘুরবেন! তাও পায়ে হেঁটে? ঠিক তাই-ই করেছেন তং ইয়াও-হুই ও তার দুই বন্ধু উ ত-ইউয়ে এবং ঝং ইউয়ান হুয়া। এই পরিকল্পনা সফল হওয়ার পর দলনেতা তং ইয়াও বনে গেলেন ‘সন অব গ্রেট ওয়াল’ বা ‘মহাপ্রাচীর পুত্র’।
তং ইয়াওয়ের মহাপ্রাচীর অভিযানের গল্প শুরু হয়েছে তার কাজের জায়গা থেকেই। বয়স যখন ২৫, তিনি তখন পাওয়ার ক্যাবল টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। কবিতা লিখতেন টুকটাক। তার বাড়ি সাংহাই পাসের নিকটবর্তী এলাকায়।
তং ইয়াওয়ের মহাপ্রাচীর অভিযানের গল্প শুরু হয়েছে তার কাজের জায়গা থেকেই। বয়স যখন ২৫, তিনি তখন পাওয়ার ক্যাবল টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন। কবিতা লিখতেন টুকটাক। তার বাড়ি সাংহাই পাসের নিকটবর্তী এলাকায়।
চীনের পূর্বাঞ্চলের সাংহাই পাস থেকে শুরু হয়ে উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ ধরে মহাপ্রাচীর বিস্তৃত হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলের জিয়াউ পাস পর্যন্ত। পাথর, বালু ও ইটে নির্মিত ১৬ থেকে ২৬ ফুট উঁচু এ প্রাচীরের বর্তমান দৈর্ঘ্য ২১ হাজার কিলোমিটার। এটি গেছে চীনের ১৫টি প্রদেশ, ৯৭টি প্রেফেকচার ও ৪০৪টি কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে। উত্তরের বহিঃশত্রুদের হাত থেকে সাম্রাজ্য রক্ষায় ছোট্ট পরিসরে এই মহাপ্রাচীর নির্মাণ শুরু হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। পরে খ্রিস্টপূর্ব ২২০ সালে রাজা কিন শি হুয়াং কিন শাসনামলের গোড়াপত্তন করলে খণ্ড খণ্ড দেয়াল ভেঙে ফেলেন। শুরু হয় বৃহৎ পরিসরে প্রাচীর নির্মাণের কাজ। তবে বর্তমান যে মহাপ্রাচীর পর্যটকদের মূল আকর্ষণের জায়গা, এটি নির্মিত হয় মিং শাসনামলে, চতুর্দশ শতকের শেষ থেকে সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে। অবশ্য, এটি বিস্তৃত হয়েছিল হান শাসনামলে বিখ্যাত বাণিজ্য রুট সিল্ক রোডের নিরাপত্তার স্বার্থে।
ইয়াও ও তার দুই বন্ধু অভিযান শুরু করেন ৬শ’ বছর আগে অর্থাৎ মিং শাসনামলে নির্মিত মূল মহাপ্রাচীরের ৮ হাজার ৮শ’ ৫১ কিলোমিটারকে কেন্দ্র করে। যদিও এ যাত্রায় তখন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খুব বেশি সহায়তা পাননি তারা। কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্বও দিয়ে দেখেনি। তবু দুঃসাহসী যাত্রায় নামেন ইয়াও বন্ধুত্রয়
ইয়াওয়ের মুখেই শুনুন তবে, ‘আমি যখন বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠতাম, তখনই মহাপ্রাচীরের কথা ভাবতাম। ধীরে ধীরে এর প্রতি আমার আগ্রহ বাড়তে থাকলো। কে এটা বানিয়েছে? কেন এবং কখন এটা তৈরি হয়েছে? এসব প্রশ্ন মনে আসতো। আমার আগ্রহকে পরে আমি সুস্পষ্ট পরিকল্পনায় রূপ দিই।’
পরিকল্পনার মাত্র দুই বছর পর তিনজনে অভিযান শুরু করেন। তখন ১৯৮৪ সাল। বসন্তের সকাল। তং ইয়াও ও তার দুই বন্ধু প্রয়োজনীয় রসদ নিয়ে বের হয়ে পড়েন মহাপ্রাচীর জয় করতে। যাত্রা শুরু করেন সাংহাই পাসের লাওলতু থেকে। প্রথমদিন সন্ধ্যার সূর্য বিদায় জানানোর আগে তারা বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে যান। রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয় একটি দুর্গে। যেখানে শত বছর পূর্বে মহাপ্রাচীরের নিরাপত্তারক্ষী থাকতেন।
এভাবে একদিন দু’দিন নয়, এক মাস দু’মাসও নয়; দীর্ঘ ১৭ মাস (৫০৮ দিন) পেরিয়ে তারা জয় করেন মহাপ্রাচীর। প্রতিটি দিন তাদের জন্য ছিলো চ্যালেঞ্জিং, ছিলো তাদের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কারের উত্তেজনা। এই সময়ের মধ্যে তারা প্রায় ৮ হাজার ৮শ’ ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন। এ অভিযান তাদের ধৈর্য পরীক্ষা যেমন নিয়েছে, তেমনি এতোটা পথ সফলভাবে পাড়ি দেওয়ার জন্য তাদেরকে স্থান দিয়েছে রেকর্ড বুকেও।
তবে কেবল ঘোরাঘুরি বা বেড়ানোই নয়, এমন রোমাঞ্চকর ও দুঃসাহসী অভিযাত্রা ইয়াও ও তার বন্ধুদের জীবন বদলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, উপকার হয়েছে মহাপ্রাচীরেরও। তিনজনের এ অভিযাত্রার অভিজ্ঞতা প্রাচীরের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন সাধনে রেখে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
৬২ বছর বয়সী তং ইয়াও বলেন, এটা প্রথম কোনো অভিযান যা বিস্তৃত এ মহাপ্রাচীরের বুকে মানুষের পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। বহু চড়াই-উতরাই পার করতে হয়েছে আমাদের। গ্রীষ্মের খরতাপ, শীতের তুষার এবং প্রাচীরের উচ্চতা- সবগুলো ছিলো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু আমরা ছিলাম অদম্য। আমরা শুধু হেঁটেছি আর হেঁটেছি এবং লিপিবদ্ধ করেছি নোট আকারে, চোখের সামনে যা-ই পড়েছে।
চীনের মহাপ্রাচীরের বিশালত্ব বোঝাতে বলা হতো, চাঁদ থেকে মানুষের এই সৃষ্টিকর্ম দেখা যায়। তং এবং তার বন্ধুদের অভিযানের মাত্র ৩ বছর পর ১৯৮৭ সালে গ্রেট ওয়ালকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো)। পরে কর্তৃপক্ষ ২০০৬ সালে গ্রেট ওয়াল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি রেজ্যুলুশন পাস করে।
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে এখানে। গড়ে প্রতিদিনি ৬৫ হজারেরও বেশি পর্যটক আসে ভ্রমণে। যা প্রাচীরের নিকটবর্তী গ্রামগুলোর আর্থিক দৈন্যতা দূর করে দিয়েছে।
বর্তমানে তং ইয়াও একজন গবেষক। জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় কাটিয়ে দিয়েছেন এই মহাপ্রাচীর নিয়ে। তবে, মহাপ্রাচীরের রুগ্ন দশা নিয়ে মন খারাপ তার। কারণ সংস্কার ও উন্নয়নকাজ না করায় প্রাচীরের বহু অংশ ধ্বসে পড়ছে।
২০১৪ সালে গ্রেট ওয়াল সোসাইটির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র ৮ দশমিক দুই শতাংশ প্রাচীর ভালো আছে। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইয়াও। ২০১৬ সালের দিকে কর্তৃপক্ষ সতর্ক হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়।
তং ইয়াওয়ের অভিযান নিয়ে ‘মিং ডাইনেস্টি গ্রেট ওয়াল এক্সপেডিশন’ শিরোনামে একটি বইও প্রকাশিত হয়। যা তং ইয়াও-হুইকে ‘সন অব গ্রেট ওয়াল’ হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বিল ক্লিনটন যখন চীনের মহাপ্রাচীর পরিদর্শনে আসেন, তং ইয়াও ছিলেন তাদের অভিজ্ঞ গাইড।
ইয়াও ও তার দুই বন্ধু অভিযান শুরু করেন ৬শ’ বছর আগে অর্থাৎ মিং শাসনামলে নির্মিত মূল মহাপ্রাচীরের ৮ হাজার ৮শ’ ৫১ কিলোমিটারকে কেন্দ্র করে। যদিও এ যাত্রায় তখন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে খুব বেশি সহায়তা পাননি তারা। কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্বও দিয়ে দেখেনি। তবু দুঃসাহসী যাত্রায় নামেন ইয়াও বন্ধুত্রয়
ইয়াওয়ের মুখেই শুনুন তবে, ‘আমি যখন বৈদ্যুতিক খুঁটিতে উঠতাম, তখনই মহাপ্রাচীরের কথা ভাবতাম। ধীরে ধীরে এর প্রতি আমার আগ্রহ বাড়তে থাকলো। কে এটা বানিয়েছে? কেন এবং কখন এটা তৈরি হয়েছে? এসব প্রশ্ন মনে আসতো। আমার আগ্রহকে পরে আমি সুস্পষ্ট পরিকল্পনায় রূপ দিই।’
পরিকল্পনার মাত্র দুই বছর পর তিনজনে অভিযান শুরু করেন। তখন ১৯৮৪ সাল। বসন্তের সকাল। তং ইয়াও ও তার দুই বন্ধু প্রয়োজনীয় রসদ নিয়ে বের হয়ে পড়েন মহাপ্রাচীর জয় করতে। যাত্রা শুরু করেন সাংহাই পাসের লাওলতু থেকে। প্রথমদিন সন্ধ্যার সূর্য বিদায় জানানোর আগে তারা বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে যান। রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হয় একটি দুর্গে। যেখানে শত বছর পূর্বে মহাপ্রাচীরের নিরাপত্তারক্ষী থাকতেন।
এভাবে একদিন দু’দিন নয়, এক মাস দু’মাসও নয়; দীর্ঘ ১৭ মাস (৫০৮ দিন) পেরিয়ে তারা জয় করেন মহাপ্রাচীর। প্রতিটি দিন তাদের জন্য ছিলো চ্যালেঞ্জিং, ছিলো তাদের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কারের উত্তেজনা। এই সময়ের মধ্যে তারা প্রায় ৮ হাজার ৮শ’ ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন। এ অভিযান তাদের ধৈর্য পরীক্ষা যেমন নিয়েছে, তেমনি এতোটা পথ সফলভাবে পাড়ি দেওয়ার জন্য তাদেরকে স্থান দিয়েছে রেকর্ড বুকেও।
তবে কেবল ঘোরাঘুরি বা বেড়ানোই নয়, এমন রোমাঞ্চকর ও দুঃসাহসী অভিযাত্রা ইয়াও ও তার বন্ধুদের জীবন বদলে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, উপকার হয়েছে মহাপ্রাচীরেরও। তিনজনের এ অভিযাত্রার অভিজ্ঞতা প্রাচীরের রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন সাধনে রেখে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
৬২ বছর বয়সী তং ইয়াও বলেন, এটা প্রথম কোনো অভিযান যা বিস্তৃত এ মহাপ্রাচীরের বুকে মানুষের পদচিহ্ন এঁকে দিয়েছে। বহু চড়াই-উতরাই পার করতে হয়েছে আমাদের। গ্রীষ্মের খরতাপ, শীতের তুষার এবং প্রাচীরের উচ্চতা- সবগুলো ছিলো আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং, কিন্তু আমরা ছিলাম অদম্য। আমরা শুধু হেঁটেছি আর হেঁটেছি এবং লিপিবদ্ধ করেছি নোট আকারে, চোখের সামনে যা-ই পড়েছে।
চীনের মহাপ্রাচীরের বিশালত্ব বোঝাতে বলা হতো, চাঁদ থেকে মানুষের এই সৃষ্টিকর্ম দেখা যায়। তং এবং তার বন্ধুদের অভিযানের মাত্র ৩ বছর পর ১৯৮৭ সালে গ্রেট ওয়ালকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো)। পরে কর্তৃপক্ষ ২০০৬ সালে গ্রেট ওয়াল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি রেজ্যুলুশন পাস করে।
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে এখানে। গড়ে প্রতিদিনি ৬৫ হজারেরও বেশি পর্যটক আসে ভ্রমণে। যা প্রাচীরের নিকটবর্তী গ্রামগুলোর আর্থিক দৈন্যতা দূর করে দিয়েছে।
বর্তমানে তং ইয়াও একজন গবেষক। জীবনের প্রায় অর্ধেক সময় কাটিয়ে দিয়েছেন এই মহাপ্রাচীর নিয়ে। তবে, মহাপ্রাচীরের রুগ্ন দশা নিয়ে মন খারাপ তার। কারণ সংস্কার ও উন্নয়নকাজ না করায় প্রাচীরের বহু অংশ ধ্বসে পড়ছে।
২০১৪ সালে গ্রেট ওয়াল সোসাইটির এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র ৮ দশমিক দুই শতাংশ প্রাচীর ভালো আছে। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা এবং বর্তমানে এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইয়াও। ২০১৬ সালের দিকে কর্তৃপক্ষ সতর্ক হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়।
তং ইয়াওয়ের অভিযান নিয়ে ‘মিং ডাইনেস্টি গ্রেট ওয়াল এক্সপেডিশন’ শিরোনামে একটি বইও প্রকাশিত হয়। যা তং ইয়াও-হুইকে ‘সন অব গ্রেট ওয়াল’ হিসেবে খ্যাতি এনে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং বিল ক্লিনটন যখন চীনের মহাপ্রাচীর পরিদর্শনে আসেন, তং ইয়াও ছিলেন তাদের অভিজ্ঞ গাইড।
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.