হেপাটাইটিস এ হল হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাসের সংক্রমনে সৃষ্ট একটি তীব্রসংক্রামক রোগ যা প্রদাহ সৃষ্টি করে যকৃতের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটায়। পাঁচটি পরিচিত হেপাটাইটিস (এ, বি, সি, ডি, ও ই) ভাইরাসের মধ্যে এটি অন্যতম। শিশু কিংবা বড় যে কারোরই এই রোগ হতে পারে। হেপাটাইটিস এ ভাইরাসের সংক্রমনে অনেক ক্ষেত্রে কোন উপসর্গই দেখা যায় না বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ দেখা যায়।
সাধারনত সংক্রমণ এবং উপসর্গের মধ্যে দুই থেকে ছয় সপ্তাহের ব্যবধান থাকে এবং উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর মোটামুটিভাবে আট সপ্তাহ স্থায়ী হয়। উপসর্গসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জ্বর, তলপেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, উদরাময়, ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। আবার কিছু ক্ষেত্রে, প্রাথমিক সংক্রমণের পরবর্তী ছয় মাস সময়ে উপসর্গসমূহ আবার ফিরে আসতে পারে। মৃদু বা হাল্কা হেপাটাইটিস এ এর ক্ষেত্রে তেমন কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। সাধারনত এই রোগে যারা আক্রান্ত হন, তারা কোন রকম যকৃতের ক্ষতি ছাড়াই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সু্স্থ হয়ে ওঠেন। কিছু ক্ষেত্রে যকৃতের তীব্র বিকলতা হতে পারে বিশেষ করে প্রবীণ মানুষদের ক্ষেত্রে। দূষিত খাবার ও পানি গ্রহণ এবং আক্রান্ত ব্যক্তি সংস্পর্শে আসলে এই রোগ হতে পারে।
কিভাবে ছড়ায়
এটা সাধারণত সংক্রামিত মল দ্বারা দূষিত খাবার বা পানি পানের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। আবার আক্রান্ত ব্যক্তির রান্না করা বা পরিবেশন করা খাবার খেলে, মারাত্মকভাবে হেপাটাইটিস ‘এ’ আক্রান্ত এলাকায় বসবাস বা ভ্রমণ করলে, হেপাটাইটিস ‘এ’ আক্রান্ত কোন ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে, ধূমপান বা যেকোনো মাদক সেবন করলে কিংবা সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বা স্পর্শের মাধ্যমেও এটা ছড়াতে পারে।অনেক ক্ষেত্রে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও কোন উপসর্গই দেখা যায় না, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। আবার শিশুরা সংক্রমিত হলে বেসিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মধ্যে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না, কিন্তু তাদের থেকে অন্যদের সংক্রমণ হতে পারে। সাধারনত হেপাটাইটিস এ ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার এক মাস পর পর্যন্ত এর কোন লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। যদি উপসর্গ দেখা যায়, তখন সেগুলো মোটামুটি আট সপ্তাহ স্থায়ী হয়। উপসর্গসমূহ হল অবসাদ অনুভব করা, বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি করা, উদরাময়, ত্বক এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া, তলপেটে ব্যথা, ক্ষুদা মন্দা, জ্বর, মাংসপেশীতে ব্যথা, চুলকানি, গাঢ় রংয়ের প্রস্রাব ইত্যাদি।
প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা
যেহেতু হেপাটাইটিস এ এর উপসর্গগুলো অন্যান্য অনেক রোগের উপসর্গসমূহের অনুরূপ, তাই রোগ নির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়ে থাকে।চিকিৎসা
শিশুদের ক্ষেত্রে এটা সাধারনভাবে তেমন বিপজ্জনক নয়। একবার সংক্রমণ হওয়ার পরে একজন মানুষের মধ্যে তার অবশিষ্ট জীবনের জন্য এই রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়।এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি নেই। চিকিৎসক প্রয়োজন মনে করলে বমি বমি ভাব বা উদরাময়ের জন্য বিশ্রাম ও ওষুধের পরামর্শ দিতে পারেন। সাধারনভাবে এই রোগ সম্পূর্ণরূপে সেরে যায় এবং যকৃতের কোন সমস্যা থাকে না। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে যকৃতের চরম বিকলতা ঘটলে, যকৃত প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে তার চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।যেহেতু হেপাটাইটিস ‘এ’র কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। তাই, হেপাটাইটিস ‘এ’ আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকেরা কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেন। যেমন-
- পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।
- পানি ভালভাবে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে পান করতে হবে।
- প্রচুর পরিমানে পানি বা তরল খাবার গ্রহন করতে হবে।
- বমি বমি ভাবের ফলে কোন কিছু খেতে ইচ্ছে না করলে, সারাদিন অল্প অল্প করে হালকা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে।
- ধূমপান, অ্যালকোহল বা অন্য যেকোন মাদক বর্জন করতে হবে।
- পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করতে হবে। নিয়মিত সুষম খাদ্য যেমন- শাক-সবজি ও ফলমূল খেতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
- খাবার রান্নার সময় ভালো করে সিদ্ধ করতে হবে।
- বাসী বা পঁচা খাবার খাওয়া যাবে না।
- হোটেলের খাবার না খাওয়াই ভাল।
- রান্নার আগে হাত ভালভাবে ধুতে হবে।
- খাওয়ার আগে ও পায়খানা ব্যবহারের পর হাত ভালভাবে সাবান দিয়ে ভালভাবে ধুতে হবে।
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে রান্না করা বা রান্না পরিবেশন থেকে বিরত থাকতে হবে।
- চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনের পাশাপাশি তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।
হেপাটাইটিস ‘এ’ প্রতিরোধে করনীয়
- বারে বারে হাত ভালোমত পরিষ্কার করতে হবে।
- খাবার যথাযথভাবে রান্না করা।
- হেপাটাইটিস ‘এ’ প্রতিরোধে হেপাটাইটিস ‘এ’ এর ভ্যাকসিন নিতে হবে।
- মারাত্মকভাবে হেপাটাইটিস ‘এ’ আক্রান্ত এলাকায় ভ্রমন বা বসবাসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।
- কাচা ফল, সবজি এবং অন্যান্য খাবার ভাল করে ধুয়ে জীবাণুমুক্ত করে খেতে হবে।
- অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে এবং খাবার সবসময় গরম করে খেতে হবে।
- আক্রান্ত ব্যক্তির রান্না বা পরিবেশন করা খাবার খাওয়া যাবে না।
- আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকা বা তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা যাবে না।
- কোন কারনে রক্ত গ্রহনের প্রয়োজন হলে ভালভাবে দাতার রক্ত পরীক্ষা করে নিতে হবে।
- ধূমপান, অ্যালকোহল বা যেকোনো ধরনের মাদক বর্জন করতে হবে।
Post a Comment
Note: Only a member of this blog may post a comment.