জানাজা পড়ার নিয়ম-রীতি ও দোয়া

 

জানাজার নামাজ ফরজে কিফায়া। এ নামাজ মুসল্লিদের জন্য সওয়াব বর্ধন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমার সুপারিশ। জানাজায় লোক সংখ্যা বেশি হওয়া মুস্তাহাব এবং মুসল্লি সংখ্যা যত বাড়তে ততই ভালো। তবে কাতার বেজোড় হওয়া উত্তম। জানাজার নামাজ মূলত মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার। জানাজার নামাজ পড়ার নিয়ম, রীতি ও দোয়াগুলো তুলে ধরা হলো-

১. জানাজার নামাজে ইমাম মৃতের বুক বরাবর দাঁড়াবে। (বুখারি, হাদিস: ১২৪৬)

২. ইমামের পেছনে মুক্তাদিদের কাতার হবে। (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩১০২)

৩. সবাই আল্লাহর ইবাদত হিসেবে জানাজার ফরজ আদায়ের নিয়ত করবে। (বুখারি, হাদিস: ১)

৪. নিয়ত : মনে মনে নিয়ত করা ফরজ। মুখে পড়া ফরজ নয়। তাই মনে মনে শুধু এতটুকু নিয়ত করলেই হবে যে-

‘জানাজার নামাজ ফরজে কেফায়াহ, চার তাকবিরের সহিত এই ইমামের পেছনে আদায় করছি। নামাজ আল্লাহর জন্য দোয়া মাইয়্যেতের জন্য।

৫. এরপর তাকবিরে তাহরিমা (اَللهُ اَكْبَر) বলবে এবং কান পর্যন্ত হাত ওঠাবে।

৬.  এরপর ছানা পড়বে-

سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ-

উচ্চারণ : সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা, ওয়া তাআলা ঝাদ্দুকা ওয়া ঝাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।


অর্থ : হে আল্লাহ! সকল প্রশংসা আপনার। আপনি সব ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পবিত্র। আপনার নাম মঙ্গল ও বরকতপূর্ণ, আপনার মহত্ত্ব অতি বিরাট, আপনার প্রশংসা অতি মহত্ত্বপূর্ণ এবং একমাত্র আপনি ছাড়া আর কোনো প্রভু নেই।

৭. এরপর (দ্বিতীয়) তাকবির বলে দরুদ পাঠ করবে। এই তাকবিরে হাত ওঠাবে না–

اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ، اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ।

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ছাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা ছাল্লাইতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রাকতা আলা ইবরা-হিমা ওয়া আলা আ-লি ইবরাহিমা ইন্নাকা হামিদুম মাজিদ।


অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ কর, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর শান্তি বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান কর, যেভাবে ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত দান করেছিলে। নিশ্চয়ই তুমি অতি প্রশংসিত মহিমান্বিত।’ (নাসাঈ ১২৯১)

৮. তারপর তৃতীয় তাকবির বলে মৃত ব্যক্তি ও মুসলমানদের জন্য দোয়া করবে। তখনো হাত ওঠাবে না।

৯. তারপর চতুর্থ তাকবির বলবে। তখনো হাত ওঠাবে না। (দারাকুতনী ১৮৫৩, ইবনে আবি শায়বা  ৩/২৯৫)।

১০. এরপর ডান ও বাম দিকে সালাম ফেরাবে। (সুনানে কুবরা ৭২৩৮)

১১. ইমাম তাকবির উচ্চ স্বরে বলবে এবং বাকি দোয়া-দরুদ অনুচ্চ স্বরে পড়বে। মুক্তাদিরা সবই অনুচ্চ স্বরে তাকবির ও দোয়া-দরুদ পড়বে। (আবু দাউদ ২৭৮৪, সুনানে কুবরা ৭৪৩৩)


১২. মৃত ব্যক্তি যদি বালেগ পুরুষ বা নারী হয় তবে এই দোয়া পড়া—

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا، وَمَيِّتِنَا، وَصَغِيرِنَا، وَكَبِيرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِيمَانِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِسْلَامِ، اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلَا تُضِلَّنَا بَعْدَهُ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মাগফির লি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়েবিনা ওয়া ছগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উংছানা, আল্লাহুম্মা মান আহয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ইমান। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আঝরাহু ওয়া লা তুদিল্লানা বাদাহু।’


অর্থ : হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত এবং মৃতদের, উপস্থিত এবং গায়েবদের, ছোট ও বড়দের এবং আমাদের নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাকে জীবিত রাখবেন তাকে ইসলামের ওপরই জীবিত রাখুন। যাকে মৃত্যু দান করবেন তাকে ইমানের সাঙ্গেই মৃত্যু দিন। হে আল্লাহ! এর সাওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং এর পর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন না।’ (আবু দাউদ ৩২০১, তিরমিজি ১০২৪)

মৃত যদি ছেলে শিশু হয় তবে এই দোয়া পড়া-

اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًاً , وَّاجْعَلْهُ لَنَا أَجْرًا وَّذُخْرًا , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا شَفِيْعًا وَّمُشَفَّعًا

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআলহু লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহু লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহু লানা শা-ফিআও ওয়া মুশাফ্ফাআ।


অর্থ : হে আল্লাহ! এ বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।

আর মেয়েশিশু হলে এই দোয়া পড়া-

اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرَطًاً , وَّاجْعَلْهَا لَنَا أَجْرًا وَّذُخْرًا , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا شَفِيْعَةً وَّمُشَفَّعَة

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাজআলহা লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহা লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহা লানা শা-ফিআতাঁও ওয়া মুশাফ্ফাআহ।


অর্থ : হে আল্লাহ! এ বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।

শিশুদের জন্য দোয়া

اللَّهُمَّ أَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْر

উচ্চারণ
 : ‘আল্লাহুম্মা আইযহু মিন আযাবিল কবরি।’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি এ ছেলেটিকে কবর আজাব থেকে রক্ষা করো।’ (মিশকাত ১৬৮৯)

اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا سلفا وفرطا وذخرا وَأَجرا

উচ্চারণ
 :আল্ল-হুম্মাজআলহু লানা সালাফান ওয়া ফারাত্বান ওয়া যুখরান ওয়া আজরান’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! এ ছেলেটিকে (কেয়ামতের দিন) আমাদের অগ্রবর্তী ব্যবস্থাপক, রক্ষিত ভান্ডার ও সওয়াবের কারণ বানাও)।’ (মিশকাত ১৬৯০)

দোয়া দুইটি কারো জানা না থাকলে-

اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَات

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফির লিলমু'মিনিনা ওয়াল মু'মিনাত।


অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মুমিন নারী-পুরুষ উভয়কে ক্ষমা করে দিন।

১৩. চতুর্থ তাকবিরের পর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করা। প্রথম তাকবির ছাড়া হাত না ওঠানো। নামাজিদের কাতার তিন, পাঁচ, সাত এভাবে বেজোড় হওয়া।

(সুনানে কুবরা, হাদিস: ৭২৩৮, দারাকুতনী, হাদিস: ১৮৫৩)

Next
This is the most recent post.
Older Post

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.

[blogger]

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget