ফিনিক্সের আর এক নাম “কিউবা” (Cuba Country in the Caribbean)







         রাজধানী হাভানা

ভারতীয় বা বাঙালিরা বিদেশে বেড়াতে যাওয়া বলতে যে দেশগুলোর কথা বলেন, কিউবা হয়তো তার মধ্যে পড়ে না। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে, আপনি পস্তাবেন না। বামপন্থী রাজ্যে বড় হয়েছি। বামপন্থার খারাপ দিকগুলো দেখেছি, ভাল দিকগুলোও জানি। কিউবা নামের মধ্যেই একটা নস্ট্যালজিয়া রয়েছে। চে গেভারা, ফিদেল কাস্ত্রোর দেশ। বাঙালি তো কবে থেকেই এঁদের হিরোর স্থানে বসিয়ে নিয়েছে।



ক্যারিবিয়ান সি, গালফ অব মেক্সিকো আর উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর ছুঁয়ে গিয়েছে কিউবাকে। আমেরিকা থেকে কিউবা যাওয়া সবচেয়ে সোজা। যাওয়া যায় স্পেন থেকেও। আমি গিয়েছিলাম মায়ামি থেকে। কিউবার ভালমন্দ দুই-ই শুনেছি। এক সময়ে অটোক্র্যাট শাসনে ছিল দেশটা। আর আমেরিকা যে ভাবে কিউবাকে চার দিক থেকে চেপে ধরেছিল, সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থায় তার ছাপ রয়েছে এখনও। অনেক প্রতিকূলতা, লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এখানকার মানুষ গিয়েছেন। কিন্তু তার মধ্যেও নিজের স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখেছে কিউবা। এক কথায় কিউবা— ব্রেথটেকিংলি প্রিটি কান্ট্রি!

নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে এঁরা সাংঘাতিক গর্বিত। এখানকার আর্কিটেকচারে স্প্যানিশ ঔপনিবেশিকতার ছাপ। পুরনো স্ট্রাকচারের বাড়িগুলো এঁরা ধরে রেখেছেন। সরকারি অনুমতি নিয়ে বেশির ভাগ বাড়িতে বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট চালান স্থানীয় মানুষরা। বেড়াতে গেলে এই রকম কোথাও থাকলেই ভাল। স্থানীয় মানুষদের সংস্পর্শে না এলে একটা দেশকে বোঝা সম্ভব নয়। আমরাও হোমস্টেতেই ছিলাম। কিউবা গরিব দেশ বলেই সকলের ধারণা। কথাটা ভুল নয়। কিন্তু শিক্ষা-স্বাস্থ্যে এই দেশ কী পরিমাণ উন্নতি করেছে শুনলে অবাক হয়ে যেতে হয়! ইচ্ছে হলে গ্রামের দিকে কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন। সেখানেও থাকার ভাল ব্যবস্থা আছে।

                          চে গুয়েভারা মিউজিয়াম



কিউবার যে কোনও শহর হাভানা, সান্টা ক্লারা বা ত্রিনিদাদে খানিক ক্ষণ ঘুরলে মনে হবে ষাট-সত্তরের দশকে রয়েছি। রাস্তাঘাটে ওই সময়ের আমেরিকান গাড়ির ছড়াছড়ি। ট্যাক্সি, পার্সোনাল কার সব ওগুলোই। এটা একটা দ্রষ্টব্য বটে। আমাদের অটোর মতো দেখতে থ্রি-সিটার ট্যাক্সিগুলো ভারী মজার! এঁরা বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানি করেন না। জিগি নামের এক রকমের চিনা গাড়ি চলে অবশ্য। বাকি সব নিজেদের তৈরি, নয়তো ভিনটেজ।
এখানকার হাইওয়ে চমৎকার। আমরা গাড়ি ভাড়া করে হাভানা থেকে দেশের প্রায় একদম শেষ প্রান্ত পর্যন্ত গিয়েছিলাম। গোটা দেশটা যেহেতু দ্বীপের মতো তাই ড্রাইভওয়ে অসাধারণ! আর সাত দিনের ট্রিপে অন্তত জনা পনেরোকে লিফ্‌ট দিয়েছি। হাইওয়েতে খুব কম গাড়ি থাকে। তাই লিফ্‌ট নেওয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা। অনেক বিখ্যাত সি বিচ দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিন্তু কিউবার বিচ এক্সকুইজ়িট! জল একদম টারকোয়েজ় ব্লু। সারা দেশে প্রচুর ভাল বিচ রয়েছে। হাভানা, ভারাদেরো, সিয়েনফুয়েগোস…
রেভোলিউশনারি মিউজ়িয়াম, চে গেভারা মিউজ়িয়াম কিন্তু মিস করা যাবে না। থমকে যাওয়া সময় প্রত্যক্ষ করতে করতে ঘড়ির হিসেব থাকে না। একটা সময়ে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে থাকতেন এখানে। তাঁর বাসভবনও দেখতে যাওয়ার মতো একটা স্থান বটে।
এখানে ট্রান্সপোর্ট নিয়ে সাধারণ ভাবে কোনও সমস্যা নেই। চাইলে গাড়ি ভাড়া করে নিজের মতো দেশটা ঘুরে নিতে পারেন। পাবলিক এসি বাস, টুরিস্ট বাসও আছে। ট্যাক্সি-অটো করেও ঘোরা যায়।

আমি এমনিতেই অ্যাফ্রো-কিউবান মিউজ়িকের ভক্ত। এখানকার প্রতিটা ছোট ছোট ক্লাবে যাঁরা বাজান, তাঁরা প্রত্যেকে অসাধারণ শিল্পী। দিনের বেলায় হয়তো চাষ করছেন, কাজ করছেন। কিন্তু সন্ধে থেকে সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া, গান-বাজনা চলতে থাকে। পাব, রেস্তরাঁগুলো সন্ধে থেকেই একদম জমজমাট। কোথাও গেলে সেখানকার স্থানীয় খাবার ট্রাই করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এঁদের রাইস আর বিনস সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানীয় খাবার। আর খুব ভাল মাছ পাওয়া যায়। কিউবার কফি কিন্তু মিস করবেন না। যাঁরা স্মোক করেন তাঁরা হাভানা সিগার ট্রাই করুন। নয়তো গিফট করার জন্য বা সুভেনির হিসেবে কিনে নিয়ে যান। নিয়ে যেতে পারেন কফিও।

কিউবার হাতে তৈরি জিনিসও ভীষণ সুন্দর। কাঠের তৈরি ঘর সাজানোর সামগ্রী বা মিউজ়িক ইন্সট্রুমেন্টও কিনতে পারেন। হাতের কাজের জিনিসে রঙের বাহার চোখে পড়ার মতো।

কিউবা এখনও নিজের অর্থনীতি ঠিক মতো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। রক্ষণশীল হতে গিয়ে গ্লোবালাইজ়েশনের সুবিধেগুলো পায়নি। জিনিসপত্র বেশ দামি। বিশেষত টুরিস্টদের জন্য। তবে বিদেশে বেড়ানোর ঘাঁতঘোঁত জানলে অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।
কিউবা কিন্তু ক্রমশ বদলাচ্ছে।  বামপন্থী রাজনীতি বহাল থাকলেও তা আগের চেয়ে উদার। ফিদেল কাস্ত্রো থাকাকালীনই গ্লোবালাইজ়েশনের ঢেউ ধাক্কা মারছিল। এখনকার কিউবা দরজা খুলতে শুরু করেছে। আগামী দশ বছর পরে এই কিউবা দেখতে পাব কিনা সন্দেহ। ভাগ্যিস সময় থাকতে থাকতে ঘুরে এসেছি!

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.

[blogger]

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget