আব্রাহাম লিঙ্কন

আব্রাহাম লিঙ্কন
(১৮০৯-১৮৬৫)

আব্রাহাম লিঙ্কন শুধু আমেরিকার নন, পৃথিবীর ইতিহাসের যে কয়জন মানবতাবাদী গণতন্ত্রপ্রেমী মহান রাষ্ট্রনায়ক জন্মগ্রহণ করেছেন, তিনি তাদের অন্যতম । লিঙ্কনের জন্ম হয় আমেরিকার কেন্টাকি প্রদেশের একটি ছোট গ্রামে । লিঙ্কনের বাবা টমাস লিঙ্কন ছিলেন ছুতোর মিস্ত্রি । লেখাপড়া কিছুই জানতেন না । অতি কষ্টে দীনদরিদ্রের মত তিনি সংসার চালাতেন ।
লিঙ্কনের যখন চার বছর বয়েস, তাঁর বাবা ইন্ডিয়ানা প্রদেশের অরণ্যময় অঞ্চলে গিয়ে পাকাপাকিভাবে বসবাস করবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন । বাড়ির চারদিকে জন্তু-জানোয়ার-এর হাত থেকে বাচবার জন্য বড় বড় খুটি পোতা থাকত । কাঠের কাজ আর শিকার করেই লিঙ্কনের বাবা সংসার চালাতেন ।
এই কঠিন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে বসবাস করতে করতে লিঙ্কন হয়ে ওঠেন পরিশ্রমী সাহসী । লিঙ্কনের তখন ছয় বছর বয়েস । হঠাৎ তাঁর মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন । তখন সেখানে কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না । এক গ্রাম্য ডাক্তার থাকতেন পঁয়ত্রিশ মাইল দূরে । প্রায় বিনা চিকিৎসাতেই সাত দিন পর মারা গেলেন লিঙ্কনের মা ।
মা মারা যাওয়ার পর একটি বছর অতিক্রান্ত হল । লিঙ্কনের বাবার পূর্বপরিচিত এই মহিলার কিছুদিন আগে স্বামী মারা গিয়েছিল । সংসারে একজন মহিলার প্রয়োজন বিবেচনা করেই তাকে বিয়ে করে নিয়ে এলেন টমাস। লিঙ্কন দেশের সমস্ত মানুষের কাছে আহ্বান জানালেন যুদ্ধে যোগ দেবার জন্য । তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সৈন্যদলে নাম লেখাল চল্লিশ বছরের এক প্রাক্তন ক্যাপ্টেন, নাম গ্র্যান্ট । গ্র্যান্ট সৈনিক হিসাবে ছিলেন খুব বীর সাহসী । কিন্তু তার প্রধাণ দোষ ছিল অত্যধিক পরিমাণে মদ্যপান করতেন আর এই দোষেই তার চাকরি গিয়েছিল ।
শেষ পর্যন্ত গ্র্যান্টের প্রচন্ড আক্রমনের মুখে পিছু হঠতে আরম্ভ করলেন লী । দক্ষিণের একটার পর একটা শহর তার হাতছাড়া হয়ে গেল । শেষে লী আশ্রয় নিলেন রীচমন্ড শহরে । শহরের উপকন্ঠে তখন গ্র্যান্টের কামান গর্জন  করছে । এখন শুধু অপেক্ষা লীর আত্মসমর্পণের ।
দেশবাসীর কাছে লিঙ্কন তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন । তিনি বললেন,“কারোর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ না করে সকলের প্রতি উদার মনোভাব নিয়ে… আসুন আমরা সকলে মিলে আবদ্ধ কাজগুলি শেষ করি । জাতির ক্ষত আরোগ্য করা, এই যুদ্ধের গুরুভার যিনি বহন করেছেন তাকে অথবা তার বিধবা পত্নী ও পিতৃহীন সন্তানদের পালন করা, নিজেদের মধ্যে ও সকল জাতির সঙ্গে ন্যায্য এবং স্থায়ী শান্ত অর্জন ও পোষণের ব্যবস্থা- এই আমাদের কর্তব্য ।” অবশেষে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর যুদ্ধ শেষ হল । লী আত্মসমর্পণ করলেন ।
ওয়াশিংটনে ফিরে এলেন লিঙ্কন । শত শত মানুষের অভিনন্দনের জোয়ারে বেসে গেলেন তিনি । জনগণের ভিড় কমতেই একে একে মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা এসে ভিড় করে সেখানে । এখনো কত কাজ বাকি । রাতের বেলায় থিয়েটারে যাবার কথা । অনেকটা মেরির অনুরোধেই তিনি রাজি হলেন ।
থিয়েটার হলে পৌঁছতেই সমস্ত দর্শকরা তাকে অভিনন্দন জানাল । নিজের আসনে গিয়ে বসলেন, লিঙ্কন আর মেরি । দুঘন্টা কেটে গিয়েছে, বক্সের দরজার সামনে যে প্রহরী ছিল, তার কাছে একজন লোক এসে বলল, প্রেসিডেন্টকে একটা সংবাদ দিতে হবে । রক্ষী ভেতরে যাবার অনুমতি দিতেই আততায়ী ভেতরে ঢুকেই লিঙ্কনের মাথা লক্ষ্য করে গুলি চালাল । চেয়ারের উপর লুটিয়ে পড়লেন লিঙ্কন । লিঙ্কনকে ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হল থিয়েটার হলেন সামনের একটা বাড়িতে । আঘাতের বিরুদ্ধে তাঁর বলিষ্ঠ দেহের প্রাণসত্তার দ্বন্দ্ব চলল নয় ঘন্টা ধরে । লিঙ্কন অচেতন, সেখানে উপস্থিত মেরি, লিঙ্কনের বড় ছেলে, তাঁর মন্ত্রীপরিষদের সবাই । সকাল সাতটায় অজ্ঞান অবস্থায় লিঙ্কন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ।
মৃত্যুর সময় লিঙ্কনের বয়স হয়েছিল ছাপান্ন । এই জীবনের মধ্যেই তিনি যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অখন্ডতা এবং মানুষের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখবার জন্য সংগ্রাম করেছেন তাই নয়, তিনি তাঁর কাজের মধ্যে দিয়ে মানুষের মর্যাদার দিগন্তকে প্রসারিত করেছেন । তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছেন এক সার্বজনীন আদর্শের জন্য-জনগণের জন্য, জনগণের দ্বারা, জনগণের শাসন, যা কখনো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হবে না ।

Post a Comment

Note: Only a member of this blog may post a comment.

[blogger]

MKRdezign

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget